বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে এবার ভুয়া এন-৯৫ মাস্ক পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ করেছেন চিকিৎসকরা। গত শনিবার দেওয়া এন-৯৫ মাস্কের লেবেলে হাস্যকর রকমের বানান ভুল দেখা গেছে। বিএসএমএমইউতে যেসব চিকিৎসককে এই মাস্কগুলো দেওয়া হয়েছে তারা জানান, ‘এগুলো যে নকল তা খুব সহজেই বলে দেওয়া যায়।’
মাস্কের সতর্কবাণীতে লেখা আছে, ‘This respirator Protects agalnst cortein Panrticles. Misuse may result insickness ordeath. For proper use see supervisor orbox or can 3M…’
বাক্যটির মাঝে দুটি শব্দের শুরু করা হয়েছে বড় হাতের অক্ষর দিয়ে। বাক্যের মধ্যে রয়েছে চারটি ভুল বানানের শব্দ (against কে লেখা হয়েছে agalnst, certain কে লেখা হয়েছে cortein, particles কে লেখা হয়েছে Panrticles এবং call কে লেখা হয়েছে can)।
এ ছাড়া দুটি শব্দ মিলিয়ে ফেলা হয়েছে তিনটি জায়গায় (in sickness কে লেখা হয়েছে insickness, or death কে লেখা হয়েছে ordeath এবং or box কে লেখা হয়েছে orbox)। অথচ এই পুরো লেবেলে সর্বমোট শব্দ সংখ্যা মাত্র ২৩।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মাস্ক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থ্রি-এম। তারা তাদের পণ্যের গায়ে এমন হাস্যকর ভুলসহ লেবেল ছাপাবে, তা একেবারেই সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
থ্রি-এমের তৈরি আসল এন-৯৫ মাস্কের সঙ্গে হাতে পাওয়া মাস্কের তুলনা করে একজন চিকিৎসক বলেন, ‘এই মাস্ক খুবই নিম্নমানের। এটি তৈরির উপাদান ও কাঠামোও অন্যরকম, যা মানসম্মত নয়।’
কোভিড-১৯ রোগীর চিকিত্সকদের এক সপ্তাহে ব্যবহার করার জন্য পাঁচটি এন-৯৫ মাস্ক দেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসকরা বলেন, যে কয়েকটি মাস্ক আসল বলেই মনে হয়েছে, তবে বেশির ভাগই সুস্পষ্টভাবেই নকল।
একজন আবাসিক চিকিৎসক প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এন-৯৫ এর মতো উচ্চমানের পণ্যের গায়ে কি এই জাতীয় বানান ভুল সম্ভব?’
হাসপাতালের আরও কয়েকজন আবাসিক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিতদের মাঝে এমন মাস্ক বিতরণের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছেন। শনিবার হাসপাতালের পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগও জানিয়েছেন তারা।
চিকিৎসকরা জানান, এ মাসের শুরুর দিকে কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসকদের অরিয়েন্টেশন কর্মসূচির সময় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা চিকিৎসকদের এন-৯৫ মাস্কসহ অন্যান্য সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয়কে মাস্ক ও পিপিই কেনা এবং সেগুলোর মান নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
তবে হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. জুলফিকার আহমেদ আমিন এসব পণ্য কোন প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করেছে তাদের নাম প্রকাশ করেননি। এমনকি এসব কিনতে কত টাকা খরচ হয়েছে বা কোন প্রক্রিয়ায় কেনা হয়েছে তাও জানাননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. জুলফিকার আহমেদ আমিন বলেন, ‘আমরা চিকিৎসকদের কাছ থেকে কিছু অভিযোগ পেয়েছি। সেসব অভিযোগের তদন্ত করছি। এখন আমরা অন্য জায়গা থেকে মাস্ক সংগ্রহ করছি।’
তিনি জানান, যারা মানের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন তাদের বলা হয়েছে মাস্কগুলো ফিরিয়ে দিতে। তাদের নতুন মাস্ক দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এন-৯৫ মাস্ক নিয়ন্ত্রণ করে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ ও অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।
এন-৯৫ এমন এক ধরনের মাস্ককে বোঝায় যেটি বাতাসের শূন্য দশমিক ৩ মাইক্রন বা তার চেয়ে বড় কণা ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত আটকাতে পারে। এক মাইক্রন সমান এক মিটারের ১০ লাখ ভাগের এক ভাগ। ভাইরাসগুলো শূন্য দশমিক ৩ মাইক্রন পরিসীমার মধ্যেই থাকে।
এর আগে নকল মাস্ক ও পিপিই দেওয়া নিয়ে গত এপ্রিলের শুরুর দিকে অনেক সরকারি হাসপাতালের চিকিত্সকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা মাস্কের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন এবং তাদের কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তা প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
নকল ও নিম্নমানের মাস্কের কারণে চিকিৎসক, তাদের পরিবার এবং রোগীদের মাঝে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরাও।
বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত অন্তত ৭১ জন চিকিৎসক কোভিড-১৯ সংক্রমণে মারা গেছেন। এ ছাড়া আরও ১১ জন কোভিড-১৯ এর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।
Leave a Reply